নদীর উচ্চ গতিতে গঠিত ভূমিরূপ সমূহ

           আদর্শ নদীতে তিনটি গতি থাকে - উচ্চ গতি (up forces), মধ্য গতি (middle forces) ও নিম্নগতি (Down Forces), নদী তার এই গতি পথের তিনটি ধাপেই (three step) তার কাজ সাধন করে থাকে । ঠিক সেই রকম উচ্চ গতিতে ক্ষয় সাধন করার ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপ (types of land) গড়ে ওঠে তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো --

  DOWNLOAD EDUCOSTUDY APP FROM PLAYSTORE CLICK HERE

গিরিখাত   পার্বত্য অঞ্চলে নদীর পার্শ্ব ক্ষয় অপেক্ষা নিম্ন ক্ষয় খুব বেশি হয়। তাই এই অঞ্চলে নদী খাড়া ভাবে নিচের দিকে নেমে গিয়ে ইংরেজি 'I' বা 'V' আকারের নদীখাত সৃষ্টি করে। এই রূপ গভীর নদী খাত কে গিরিখাত বলে। যেমন - আমেরিকার কলোরাডো নদীর উপর সৃষ্টি গিরি খাত।


নদীমঞ্চ     পার্বত্য প্রবাহে নদীর কাজ ক্ষয় ও বহন হলেও নদী কখনো কখনো সঞ্চয় কাজ ও করে থাকে। এই সময় নদীর ক্ষয় করা বস্তুর ওজন যদি নদীর পক্ষে বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে তখন এই অতিরিক্ত বোঝা নদীর তলদেশে জমতে থাকে, পরবর্তী কালে যদি প্লাবিত হলে ওই সঞ্চিত বস্তু অপসারিত হয়ে নদী খাতের উপরে অবস্থান করে, একে নদিমঞ্চ বলে । যেমন -- গঙ্গা নদীর উচ্চ গতিপথে এমন নদী মঞ্চ দেখা যায়।

প্রপাত কূপ     জল প্রপাতের জল নিচে যে অংশের উপর প্রবল গতিতে পড়ে, নদীর সেই অংশে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়, একে প্রপাত কূপ বলে।

মন্থকূপ      নদীর গতিপথে যদি হঠাৎ কোনো কঠিন প্রস্তর খন্ড এসে পড়ে তবে যদি তাকে হঠাৎ করে সরিয়ে দিতে পারেনা। এর ফলে নদীর জলপ্রবাহ ঘুরতে থাকে, এবং নদীর গর্ভে এক গোলাকার গর্তের সৃষ্টি হয়, এই গোলাকার গর্ত কে মন্থকূপ বলে। তিস্তা নদীতে এইরকম অনেক মন্থকূপ দেখা যায়।

জলপ্রপাত     নদীর গতিপথ কঠিন ও কোমল শিলাস্তরে অনুভূমিক বা আড়াআড়ি ভাবে অবস্থান করলে উপরের কঠিন শিলাস্তরে ধীরে ধীরে ক্ষয় প্রাপ্ত হতে থাকে এবং নিচের কোমল শিলাস্তর বেরিয়ে পড়ে। এর ফলে যদি খাড়া ঢাল থেকে নড়ল শিলাস্তরে বিপুল বেগে পড়ে ও জলপ্রপাত সৃষ্টি করে। ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত গোরাসাপ্পা বা যোগ এই ভাবে সৃষ্টি হয়েছে।

জলবিভাজিকা       দুটি আলাদা নদী প্রবাহ যখন কোনো উচ্চ ভূমি দ্বারা আলাদা বা বিচ্ছিন্ন হয় তখন ওই উচ্চ ভূমিকে জলবিভাজিক বলা হয়। ভারতের বিন্ধ ও সাতপুরা পাহাড় জলবিভাজিকার উল্লেখ যোগ্য উদাহরণ, কেননা এই দুটি পাহাড়ের জন্য উত্তর ও দক্ষিন ভারতের নদী অববাহিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করেছে।

  DOWNLOAD EDUCOSTUDY APP FROM PLAYSTORE CLICK HERE

খরস্রোত        অনেক সময় দেখা যায়, উপর থেকে নদী নিচের দিকে খাড়া ঢালে না নেমে এসে ধাপে ধাপে নামতে থাকে । এই রকম ভাবে নদী নিচে নামতে থাকলে ছোটো ছোটো জলপ্রপাত সৃষ্টি করে। এইরূপ ছোটো ছোটো জলপ্রপাত খরশ্রোত নাম পরিচিত। নীল নদের গতিপথে এইধরণের অনেক খরশ্রোত দেখা যায়।

শৃঙ্খলিত শৈলশিরা       নদীর উচ্চ গতিপথে পাহাড় বা শৈলশিরা যদি নদীকে বাধা বাধা দেয় তবে নদী একে বেঁকে চলে এরকম অবস্থানে নদীকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় নদী যেন শৈলশিরা গুলি দ্বারা আবদ্ধ হয়ে অবস্থান করেছে। নদীর এইরূপ অবস্থান কে শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বলা হয়। 

                        প্রয়োজনীয় কিছু কথা
  • নদীর প্রধান তিনটি কাজ - ক্ষয় সাধন, বহন ও সঞ্চয় ।
  • নদীর প্রবাহ কে কিউসেক দ্বারা পরিমাপ করা হয়। কিউসেক কথার অর্থ হলো কিউবিক ফিট পার সেকেন্ড। বলা যায় নদীর একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয় তাকে কিউসেক বলে।
  • আবার নদী খাতের কোনো নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘন মিটার জল প্রবাহিত হয়, তাকে কিউমেক বলে।
  • নদীর গতিপথ, জলের পরিমান, ও নদীর গতিবেগের উপর নির্ভর করে নদীর শক্তি গোরে ওঠে। যদি নদীর জল এর পরিমান দ্বিগুন হয় তবে তার বহন ক্ষমতাও দ্বিগুন বেড়ে যায়, কিন্তু নদীর গতিবেগ দ্বিগুন বাড়লে তার বহন ক্ষমতা ৬৪ গুন বেড়ে যায়। নদীর শক্তি বেড়ে যাওয়ার এই ঘটনা কে নদীর ষষ্ঠঘাতের সূত্র বলে।
  DOWNLOAD EDUCOSTUDY APP FROM PLAYSTORE CLICK HERE



অন্যান্য  গুরুত্বপূর্ণ