ধর্ম মঙ্গলের কবি রূপরাম চক্রবর্তীর (Rupram-Chakrabarty) কবি পরিচয় ও কাব্য পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা - pdf

   মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য ধারায় যতগুলি কাব্য সৃষ্টি হয়েছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্মমঙ্গল। আমরা এর আগে ধর্মমঙ্গল কাব্যের সৃষ্টি বৈশিষ্ট্য আর ধর্ম দেবতার স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করেছি 👈 । আর এখানে আমরা ধর্ম মঙ্গলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রূপরাম চক্রবর্তীর ( Rupram-Chakrabarty ) কবি পরিচয় ও কাব্য পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা করলাম - 


রূপরাম চক্রবর্তী

ধর্মমঙ্গল ধারার প্রথম উল্লেখ্য কবি রূপরাম চক্রবর্তী। ধর্মমঙ্গলের যে কাহিনী ছড়া, পাঁচালি ও ব্রতকথার সংকীর্ণ সীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল রূপরাম সেই অগ্রথিত কাহিনীকে প্রথম এক সংহত রূপ দান করেন। রূপরামের কাব্যের অনেকটাই অবশ্য প্রকাশিত নয়। লাউসেনের জন্ম থেলে আখ্যান মল্লবিদ্যা পর্যন্ত তাঁর কাহিনী।


কবির কাল

রূপরামের কাল নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সুকুমার সেন মনে করেছেন কবির কাল ১৬৪৯-৫০ খ্রীষ্টাব্দ। যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধির মতে কবির কাব্যরচনার সময় ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দ। আবার বসন্তকুমার চ্যাটার্জীর মতে কবির কাব্যরচনার কাল ১৭১৯ সাল।

রূপরাম চক্রবর্তীর (Rupram-Chakrabarty)
Educostudy.in/Rupram-Chakrabarty


  দীনেশচন্দ্র সেনের মতে তা ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধ। আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে কবি কাব্যরচনার কাল ১৫৯০ খ্রীষ্টাব্দে। সাম্প্রতিককালে সুখময় মুখোপাধ্যায় বিস্তারিত গবেষণা করে বলেছেন যে সময়টি ১৬৬২-৬৩ খ্রীষ্টাব্দ। কবি কোনো কোনো পুথিতে একটি প্রহেলিকাময় চারছত্রের কাল জ্ঞাপক পয়ার পাওয়া যায়। সেটি এরকম –


শাকে শীমে জর হৈলে যত শক হয়।
তিন বাণ চারি যুগ বেদ যত হয়।।
রসের উপরে রক্ষা তায় রস দেহ।
এই শকে গীত হৈয়া লেখা করি লেহ।।


কিন্তু এতে করে সময়টি আরো গুলিয়ে গেছে। তবে মোটামুটি সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কবি এসেছিলেন বলেই সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে। কবির জন্ম মুকুন্দরামের জন্মস্থান দামুন্যার কাছাকাছি বর্ধমান জেলার কাইতি-শ্রীরামপুর গ্রামে। বাবা শ্রীরাম চক্রবর্তী, মা দময়ন্তী।


   পড়াশোনায় মনোযোগী না হবার জন্য বড় ভাই রত্নেশরের কাছে তিরস্কৃত হয়ে মনের দুঃখে কবি বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং বাড়ী থেকে আড়াই ক্রোশ দূরে আড়ই গ্রামে রঘুনাথ পণ্ডিতের ঘরে আশ্রয় পান। উদ্ধৃত রূপরাম গুরুর সঙ্গে তর্ক করে সেখান থেকেও বিতাড়িত হন।


   পথে পুকুর পাড়ে দুটি ভয়ঙ্কর বাঘ দেখে ভয় পেয়ে যান। এটা আসলে ধর্মের মায়া। অবশেষে ধর্মঠাকুর কবির সামনে এসে কবিকে কাব্যরচনার নির্দেশ দেন। কবি কাব্যরচনা করে গায়কের দল তৈরী করন এবং নিজেই আসলে গান করতেন।


কাব্যবৈশিষ্ট্য ও কবিকৃতিত্ব

সপ্তদশ শতাব্দীর কবি তিনি। প্রতিভা তাঁর নেহাতই সামান্য, কিন্তু ধৈর্য ছিল। তাই একটি বিরাট কাহিনীকে কাব্যের মালায় গাঁথতে পেরেছিলেন। বাস্তবজীবনের কাহিনী বর্ণনায় তার অনাড়ম্বর ভাষায় মুগ্ধকর সাবলীলতা সত্যই দর্শনীয়। চরিত্রচিত্রণে শক্তির প্রকাশ বেশি। সালে ভর দেওয়ার সময় রঞ্জাবতীর মর্ত্য জীবন পিপাসা বড় চিত্তাকর্ষী-


পুত্রবর নাঞী পাই শালে গিয়া মরি।
মনে পুনর্বার জীব হেন সাধ করি।।
কী কহিব কাহারে এ বচন অগাধ।
এমন বয়সে মরি বিধাতার সাধ।।


লাউসেনের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় চমৎকার দিয়েছেন কবি। গৌড়যাত্রার পথে আদর্শনিষ্ট লাউসেন ভ্রষ্টা নারী নয়ানীর ছলনার উত্তর দেয় –


শিশুকাল হৈতে আমি ধর্মের তপস্বী।
শুক্রবার দিনে মোর ধর্ম একাদশী।
শনিবারে পারণাতে ভক্ষ্য ভোজ্য খাই।
ধর্মের সেবক হয়্যা সুখ নাহি চাই।।


অন্তজ কালুডোমের গ্রাম্যচরিত্রটি যথেষ্ট বাস্তব। রূপসজ্জার বর্ণনায় কবি পাণ্ডিত্যের পরিচয় রেখেছেন –


কপালে সিঁদুর পরে তপন উদয়।
চন্দন চন্দ্রিমা তার কাছে কাছে রয়।।
চন্দ্রকালে শোভা যেন করে তারাগণ।
ঈষৎ করিয়া দিল বিন্দু বিচক্ষণ।।


শিশু লাউসেনের বর্ণনায় উৎপ্রেক্ষা অলংকার চমৎকৃতি লাভ করেছে-


নির্মল সুবীর যেন শিরীষের ফুল।
পঙ্কজ সদৃশ দৃষ্টি চরণ রাতুল।।
তিল ফুল শোভে উন্নতি নাসিকা অনুপান।
তনুরুচি শোভে যেন দুর্বাদল শ্যাম।।


প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

হাস্য ও করুণ রস সৃষ্টিতে কবির স্বাভাবিক প্রতিভা ছিল। সবচেয়ে বড় কথা মর্ত্যমানবের প্রতি তার দৃষ্টি ছিল বেশী। জীবনের সন্বন্ধে সচেতনতা কবির কল্পনার উদ্দামতা ও উচ্ছ্বলতাকে সংযত করেছে। অসাধারণ কবি কখনোই নন, নিতান্ত সামান্য কিন্তু অকপট এক অন্তরঙ্গ কবিপুরুষ এই রূপরাম চক্রবর্তী।



👉👉   এখানে আমরা ধর্মমঙ্গল কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবি রূপরাম চক্রবর্তীর কবি পরিচয় কাব্য কাল কাব্য বৈশিষ্ট্য ও কাব্য পরিচয় নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করলাম। এছাড়াও বাংলা সাহিত্যের অন্য সকল প্রশ্ন গুলির জন্য উপরে দেওয লিঙ্ক টিকে ফলো করতে পারেন।