ধর্ম মঙ্গল (Dharma-Mangal) কি ? এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা - ধর্ম দেবতার স্বরূপ আলোচনা - pdf
বাংলা মঙ্গলকাব্যের অন্যতম একটি পর্ব ধর্মমঙ্গল ( Dharma-Mangal ) কাব্য যাকে সাধারণভাবে আমরা রাঢ়ের জাতীয় কাব্য বলে জানি। মধ্যযুগে রচিত হওয়া এই কাব্যটি বাংলা সাহিত্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তাই আমরা এখানে ধর্মমঙ্গল কাব্যের সৃষ্টি এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করলাম।
ধর্মমঙ্গল কাব্য
পতন অভ্যুদয় বন্ধুর পন্থায় সঙ্কুল বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাসে দুর্বল মানবতা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন দেবদেবী ও তাঁদের আশিষ্ঠ মানবপুত্রদের বীর্য গাথা শুনে অক্ষমের তৃষ্ণা মেটাত। সেই প্রয়োজনেই আদি মধ্যযুগের কোন অজানা অধ্যায়ে বাংলা ধর্মসংস্কৃতি সাহিত্য জগতে ধর্মদেবতার আবির্ভাব।
![]() |
Educostudy.in/Dharma-Mangal |
পূর্বে ভাগীরথী, উত্তরে ময়ূরাক্ষী, দক্ষিণে দামোদর, পশ্চিমে ছোটনাগপুর মালভূমি এই বেষ্টিত ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে রাঢ়বঙ্গের অনার্য ডোম-হাড়ি-বাগ্দী তথা প্রাচীন প্রোটো অস্ট্রোলয়েড জাতিগোষ্ঠীর অসংস্কৃত জীবনাচরণে ছড়িয়ে গেল ধর্মদেবতার প্রভাব। লোকায়ত জীবন চৌহদ্দির এক অদ্ভুত গর্ভে তার জন্ম। লোকসংস্কৃতির বিরাট এলাকায় তাঁর প্রচার। তিনি বঙ্গীয় দেবতা নন, একান্তভাবে রাঢ়বঙ্গীয়।
ধর্মদেবতার স্বরূপ ও পূজা
ধর্মঠাকুরের যে ধ্যানমন্ত্র পাওয়া যায় তার থেকে এই দেবতার স্বরূপ কিছুটা ধারণা করা যেতে পারে। মন্ত্রটি এইরকম –
যস্যাণ্ডো নাদিমধ্যো ন চ উরচরণৌ নাস্তি কায়ো
ন নাদঃ নাকারো নৈবরূপং ন চ ভয়মরণে
নাস্তি জন্মাদি যস্য।।
যোগীন্দ্রৈঃ ধ্যানগম্যং সকল জনময়ং সর্বলোকৈক
নাথম্
ভক্তানাং কামপূরং সুরনরবরদং চিন্তয়েৎ শূন্যমূর্তিং।।
এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ধর্ম হলেন সর্বময় প্রভু। তিনি সাধারণভাবে নিরাকার ও অরূপ, তবে নানা জায়গায় ধর্ম বলে পরিচিত কিছু প্রতীকমূর্তি পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রস্তর খণ্ডটি কুর্মাকৃতি। কোল ভাষায় কূর্ম শব্দের প্রতিশব্দ ‘দড়ম’। দড়ম্ > দরম্ > ধরম্ > ধর্ম।
এইভাবে আর্যেতর গোষ্ঠীতে কূর্মাকৃতি দেবতা থেকে ধর্ম ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছে বলে মনে হয়। নগেন্দ্রনাথ বসু হার্ভাড রিজলি প্রমুখরা তাদের গবেষণায় ধর্মঠাকুরের প্রতিমা নাকি আবিষ্কার করছিলেন। ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ২৪ পরগণা জেলার কোথাও কোথাও বীরবেশী ধর্মদেবতার মূর্তি দেখেছেন।
প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য ধর্মের সঙ্গে কূর্মের কোন সম্পর্ক স্বীকার করেননি। তাঁর মত ধর্মমূর্তি আসলে স্বাভাবিক শিলাখণ্ড। বস্তুত এর আকৃতির কোনো স্থিরতা নেই। নানাজায়গায় এটি নানারকম। উদাহরণস্বরূপ বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় গ্রামে ধর্মঠাকুর শালগ্রাম শিলার মত সুগোল। আসানসোলের বেমড়া গ্রামে তিনটি ধর্মঠাকুরই ডিম্বাকৃতি। গপালপুর গ্রামে ধর্মশিলা কাঁকড়াবিছের মত।
সাধারণত এই প্রস্তররূপী ধর্মঠাকুরেরা পল্লীর কোনো নির্জন বৃক্ষমূলে থাকেন। কোনো ভক্তও তার জন্য মন্দির নির্মান করে দিতে পারেন। ধর্মের নিত্য এবং বার্ষিক দুরকমের পূজা প্রচলিত। বিভিন্ন জায়গায় ধর্মের নামও বিভিন্ন। বেলিয়াডিহার ধর্মঠাকুরের নাম ‘বাঁকুড়া রায়’। ফুল্লরের ধর্ম হলেন ‘ফতেসিং’ শ্যামবাজারের ধর্ম দলুরায়। পশ্চিমপাড়ার ধর্ম যাত্রাসিদ্ধিরায়। বন্দীপুরের ধর্ম শ্যামরায়। ধর্মপূজার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল –
১। চৈত্র থেক আষাঢ় অনাবৃষ্টির এই সময় তার বার্ষিক পূজার কাল।
২। আনুষ্ঠানিক স্থান এই পূজার অঙ্গ।
৩। বন্ধ্যা নারীর তিনি সন্তানবর দাতা।
৪। পশুবলিতে তার তুষ্টি।
৫। সর্বশুক্ল তিনি শুক্ল উপহারে তুষ্ট।
৬। চক্ষুরোগের তিনি পরিত্রাতা।
৭। কুষ্ঠরোগ দিয়ে তিনি অবিশ্বাসীকে শাসন করেন।
৮। মাটির ঘোড়া তার পছন্দের উপহার।
৯। দ্বাদশ সংখ্যা তার কাছে পবিত্র।
১০। ডোম তার পূজারী, তার নাম পণ্ডিত। হাতে তাদের তামার তাগা, আঙুলে তামার আংটি।
প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন
স্পষ্টতই বোঝা যায় এই ধর্মদেবতা আর্যদের হতে পারেন না। ইনি আর্যেতর সমাজের।
👉👉 বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের একটি জনপ্রিয় কাব্য ধর্মমঙ্গল এই ধর্মমঙ্গল কাব্যের সৃষ্টি ধর্ম দেবতার তত্ত্ব ও ধর্মমঙ্গল কাব্যের বৈশিষ্ট্য সর্বোপরি ধর্ম নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এছাড়াও বাংলা সাহিত্যের অন্য প্রশ্নগুলির লিঙ্ক এই ☝️ ওপরে দেওয়া হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন