Psychosocial Development of child By Erickson | মনোসামাজিক বিকাশ : এরিকসন

মনোসামাজিক বিকাশ : এরিকসন


জার্মান মনোবিজ্ঞানী এরিকসন ফ্রয়েডের অনুগামী ছাত্র হিসাবে মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বোস্টন শহরে তিনি শিশু মনোসমীক্ষণ হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং সেখানে তিনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন তার ভিত্তিতে নিজস্ব সামাজিক বিকাশ তত্ত্ব গড়ে তোলেন। তার এই তত্ত্ব মনোসামাজিক তত্ত্ব নামে খ্যাতি লাভ করে।



       ফ্রয়েডের তত্ত্বে বলা হয়েছে যে জন্মের সময় শিশুর মনোরাজ্যের একমাত্র সংগঠন হলো ঈদ। ঈদ যেহেতু সুখ ভোগের নীতি দ্বারা পরিচালিত সেই কারণে প্রথম থেকেই তার একমাত্র লক্ষ্য আদিম বাসনাকে পরিপূর্ণ করা। কিন্তু বাস্তবের সাথে সংযোগ না থাকলে সুখের উপকরণ পাওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণে ঈদের অংশবিশেষ বাস্তব মুখী হয়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত শিশুর ইগো তে পরিণত হয়। যা পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবের সঙ্গে সংযোগ রাখার পাশাপাশি স্তরে প্রহরীর মতো কাজ করে।

      এরিকসন মনে করেন জন্মের সময় থেকে ঈদ এবং ইগো এই দুটি স্বতন্ত্র সত্তার অস্তিত্ব থাকে। ঈদ থেকে ইগো উৎপন্ন হয় না স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে প্রথম থেকেই সক্রিয় থাকে। কিন্তু স্বাধীন সত্তা হওয়ার জন্য সত্তা হওয়ার জন্য ইগো থাকে দমদম মুক্ত অবস্থায়। ইগোর স্বকীয়তা এবং সমাজ ও পরিবেশের দাবি এই দুইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয় আর এই দ্বন্দ্বের অবসান হয় সমাজ ও পরিবেশের সঙ্গে ব্যক্তির নিরন্তর অভিযোজন এর ফলে অর্থাৎ অহমের নির্ভর করে সমাজ ও পরিবেশের সঙ্গে ও অভিযোজন প্রক্রিয়ার উপর।

    প্রধানত দুটি কারণে ইগোর বিকাশে ব্যক্তিগত বৈষম্য সৃষ্টি হয়। প্রথম কারণ জন্মগত বা বংশগতির ফলে প্রথম থেকেই ব্যক্তিত্ব ব্যক্তিত্ব পার্থক্য থাকে। আর দ্বিতীয় কারণ প্রাথমিক এই বৈষম্যের ফলে চাহিদা ও সামাজিক চাহিদা দ্বন্দ্বের প্রকৃতি আলাদা এবং পর্যায়ক্রমে ব্যক্তির অভিযোজন প্রক্রিয়া ও আলাদা হয়।

Mother's day Best Wishes | Quotes | Status | Download

Click Here






মনোবিদ এরিকসন সমস্ত জীবনকে প্রধান চারটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন - 

প্রারম্ভিক পর্যায় ( Early Stage)
এই পর্যায়ে তিনি মোট তিনটি উপ বিভাগে ভাগ করেছেন যেমন - 

প্রথম স্তর ০-১ বছর| আস্থা বনাম অনাস্থা | Trust vs. Mistrust


        শিশুর অভিজ্ঞতার মধ্যে যদি বৈপরীত্য না থাকে অভিজ্ঞতা যদি ধারাবাহিকও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে তার মধ্যে নিরাপত্তা বোধের সৃষ্টি হয় এবং সব কিছুর প্রতি আস্থা জন্মায় আবার তার চাহিদা পূরণ না হলে অথবা তার মধ্যে ধারাবাহিকতা না থাকলে সে আস্থা হারায়। এই আস্থা ও অনাস্থার দ্বন্দ্ব দিয়েই তার জীবন শুরু হয়।

দ্বিতীয় স্তর ২-৩ বছর | স্বাধীনতা বনাম লজ্জা | 


       মা-বাবার প্রতি আস্থা সৃষ্টি হলে শিশুরা স্বাভাবিক সক্রিয়তার ক্ষেত্রে কিছুটা স্বাধীনতা পেতে চাই যদি তাকে অকারণে বাধা দেওয়া না হয় সতর্ক দৃষ্টি রেখে তাকে স্বাধীনতা ভোগ করতে দেয়া হয় তবে তার মধ্যে আত্মনির্ভরতা বাড়ে। কিন্তু যদি বড়রা তার সবকিছু করে দেয় এবং তার সক্রিয়তায় বাধা দেয় তবে তার নিজের সক্ষমতার প্রতি সন্দেহ জন্মায় তখন সে লজ্জায় ভোগে।


তৃতীয় স্তর ৪-৫ বছর | উদ্দোম বনাম অপরাধবোধ 

         স্বাধীনতা আত্মনির্ভরতা ভাষা ও বাচনিক বিকাশ প্রকৃতির ফলে শিশু নিজে থেকে নানা কাজে উদ্যোগ নিতে চাই সে তার জগৎকে নিজে থেকে জানতে চাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চাই যদি মা-বাবা শিক্ষক ও অন্যরা স্বাধীনভাবে নেওয়া এইসব উদ্যোগে বাধা না দেন তবে শিশু আরো অনুষন্ধিৎসু ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবার তার উদ্যোগের ক্ষেত্রটি সংকুচিত করে দিলে সেভাবে অন্যায় কাজ করছে ফলে তার মধ্যে অপরাধবোধ সৃষ্টি হয়।


মধ্যবর্তী পর্যায় ( Middle Stage)
এই পর্যায়ে প্রধানত প্রাথমিক শিক্ষার কাল পর্যন্ত ব্যাপ্ত এখানে একটি স্তরের কথাই বলা হয়েছে।

চতুর্থ স্তর : ৬-১১ বছর | উদ্যোগ বনাম হীনমন্যতা 

     এই সময় শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় সমবয়স্ক দের সাথে একসঙ্গে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে থাকে ধীরে ধীরে তার পরিচয়ের গুন্ডি বড় হতে থাকে তাছাড়া নানা নিয়ম কানুন মেনে চলা নিয়মের মধ্যে কাজ এমনকি খেলাধুলা করার ফলে তার মধ্যে উদ্যম ও সাহস বৃদ্ধি পায় যদি কাজে স্বীকৃতি পায় তবে বড়দের সমালোচনা আর ব্যর্থতা হলে তার জন্য তিরস্কার এসব না থাকলে উদ্যমের বিকাশ এবং অন্যথায় হীনমন্যতা জাগ্রত হয়।


তৃতীয় পর্যায় ( Third Stage )
মনোসামাজিক বিকাশ এর এই পর্যায়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময় কিশোর-কিশোরীদের নিজস্ব আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে।



পঞ্চম স্তর : ১২-১৮ বছর | আত্মপরিচয় বনাম আত্ম-পরিচয়ের বিভ্রান্তি

        শৈশবের শেষে এবং কৈশোরের শুরু থেকে আমি কে এবং কি এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা শুরু হয় অর্থাৎ অন্যরা তাকে কি মনে করে কোন দৃষ্টিতে দেখে বা কিভাবে এই বিষয়টি সম্বন্ধে কিশোর-কিশোরীরা সচেতন হয়ে ওঠে এই বয়সে একদিকে তারা আত্মপরিচয়ের সন্ধান আর অন্যদিকে আত্মপরিচয়ের বিভ্রান্তি তে ভোগে। এই কারণে এই দ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য শিক্ষক ও অনান্য বয়স্কদের উচিত ধৈর্যসহকারে ধীরে ধীরে তার নিজের পরিচয় এর সন্ধানে সাহায্য করা।


চতুর্থ পর্যায় : ( Fourth Stage )
পরবর্তী সময়ের এই পর্যায়ে কে এরিকসন তিনটি স্তরে ভাগ করেছে -

ষষ্ঠ স্তর : ১৮-৩৫ বছর | হৃদ্যতা বনাম একাকীত্ব

এই স্তরে যৌনতার বাইরে গিয়ে এক ধরনের অন্তরঙ্গতা বোধ তৈরি হয় নিজেদের আত্মপরিচয় ধরে রেখেও পারস্পারিক মনোসামাজিক দৃঢ়তা তৈরী হতে থাকে বন্ধুদের প্রতি অনান্য ঘনিষ্ঠজনের প্রতি সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রকাশ ঘটে এই কারণে সংকীর্ণ আত্মপরিচয় ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে অন্তরঙ্গতা বোধ মানুষের সামাজিক জীবনের ভিত্তি। অন্তরঙ্গতা তথা ঋদ্ধতা যদি তৈরি না হয় তবে ব্যক্তি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে।

সপ্তম স্তর : ৩৫-৬৫ বছর | উৎপাদনমুখীতা বনাম অচল অবস্থা

এই স্তরটি মানুষের জীবনের মধ্যবর্তী ও সক্রিয়তার গান সাংসারিক দায়িত্ব পালনে তৎপর মধ্যবয়স্ক মানুষ যতদূর সম্ভব নিজের উৎপাদনশীলতা কে কাজে লাগাতে চাই কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা স্তিমিত হয়ে আস। সুতরাং প্রত্যেকেই উৎপাদনমুখী তাও অচলাবস্থার দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়। সামাজিক আচরণ এই দ্বন্দ্বের প্রতিফলন ঘটে।

অষ্টম স্তর : ৫ বছরের পর | সততা বনাম হতাশা

দীর্ঘ সময় যাবত দায়িত্ব পালন করে এবং জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে মানুষ তার সামাজিক জীবনের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে জীবনের ওঠা পড়াকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেওয়ার ফলে এবং একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে সার্থক জীবন যাপনের সন্তুষ্টি লাভ করলে মানুষ তার সমস্ত অভিজ্ঞতাকে সংহত করে একটি নিজস্ব ন্যায়নিষ্ঠা পৌঁছায়। মানুষের জীবনের এই শেষ পর্যায়ের দই হলো সততা ও হতাশার দ্বন্দ্ব।